December 6, 2025
Bangladesh

আর্সেনিক: পানির নিচে লুকিয়ে থাকা এক ‘নীরব ঘাতক’

  • December 5, 2025
  • 0

“পানির অপর নাম জীবন”—ছোটবেলা থেকেই আমরা এই বাক্যটি শুনে আসছি। কিন্তু সেই পানিই যখন বিষে পরিণত হয়, তখন তা জীবনের জন্য চরম হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে

আর্সেনিক: পানির নিচে লুকিয়ে থাকা এক ‘নীরব ঘাতক’

“পানির অপর নাম জীবন”—ছোটবেলা থেকেই আমরা এই বাক্যটি শুনে আসছি। কিন্তু সেই পানিই যখন বিষে পরিণত হয়, তখন তা জীবনের জন্য চরম হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই বিষের নাম আর্সেনিক। এটি গন্ধহীন, বর্ণহীন এবং স্বাদহীন হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের পক্ষে এর উপস্থিতি বোঝা প্রায় অসম্ভব।

আজকের ব্লগে আমরা জানবো আর্সেনিক কী, এটি শরীরে কী ক্ষতি করে এবং এর থেকে বাঁচার উপায় কী।


আর্সেনিক কী এবং কেন এটি বিপজ্জনক?

আর্সেনিক একটি প্রাকৃতিক মৌল যা ভূগর্ভস্থ শিলাস্তরে থাকে। যখন মাটির নিচ থেকে অতিরিক্ত পানি উত্তোলন করা হয় বা রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে এটি পানির স্তরে মিশে যায়, তখন নলকূপের পানির মাধ্যমে তা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, প্রতি লিটার পানিতে ১০ মাইক্রোগ্রামের বেশি আর্সেনিক থাকলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বাংলাদেশে এর সহনশীল মাত্রা ৫০ মাইক্রোগ্রাম ধরা হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি মারাত্মক হতে পারে।


শরীরে আর্সেনিকের প্রভাব (লক্ষণ ও রোগসমূহ)

আর্সেনিক বিষক্রিয়া হুট করে বোঝা যায় না। এটি ধীরে ধীরে শরীরে জমা হয় এবং দীর্ঘ সময় পর এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। একে বলা হয় আর্সেনিকোসিস

১. প্রাথমিক লক্ষণ:

  • হাতের তালু ও পায়ের তলায় কালো ছোপ ছোপ দাগ পড়া (যাকে ‘ব্ল্যাকফুট ডিজিজ’ বা কেরাটোসিস বলা হয়)।
  • চামড়া খসখসে হয়ে যাওয়া বা ঘা হওয়া।
  • শারীরিক দুর্বলতা ও বমি বমি ভাব।

২. দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব:

  • ক্যান্সার: দীর্ঘ দিন আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করলে ত্বক, ফুসফুস, মূত্রথলি এবং কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
  • লিভার ও কিডনি ড্যামেজ: এটি শরীরের ছাঁকনি হিসেবে কাজ করা কিডনি ও লিভারকে অকেজো করে দিতে পারে।
  • স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি: হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া বা ঝিনঝিন করা।

আমরা কীভাবে ঝুঁকিতে পড়ছি?

শুধুমাত্র পানীয় জল নয়, আর্সেনিক আমাদের শরীরে অন্যভাবেও প্রবেশ করতে পারে:

  • সেচের পানি: আর্সেনিকযুক্ত পানি দিয়ে চাষ করা ধান বা সবজি খাওয়ার মাধ্যমে (ফুড চেইন)।
  • রান্নার কাজে: দূষিত পানি দিয়ে রান্না করলে।

প্রতিকার ও বাঁচার উপায়

আর্সেনিক থেকে বাঁচতে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। নিচে কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ দেওয়া হলো:

  1. নলকূপের পানি পরীক্ষা: আপনার বাড়ির নলকূপের পানি আর্সেনিকমুক্ত কি না, তা স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বা এনজিওর মাধ্যমে পরীক্ষা করিয়ে নিন।
  2. লাল ও সবুজ রং: পরীক্ষিত নলকূপের মুখ যদি লাল রঙের হয়, তবে সেই পানি পান বা রান্নার কাজে ব্যবহার করবেন না। সবুজ রঙের নলকূপের পানি নিরাপদ।
  3. বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ: বৃষ্টির পানি প্রাকৃতিকভাবে বিশুদ্ধ। এটি ধরে রেখে ফিল্টার করে পান করা একটি দারুণ সমাধান।
  4. ফিল্টার ব্যবহার: বাজারে এখন আর্সেনিক দূর করার মতো বিশেষ ফিল্টার (যেমন: সনো ফিল্টার) পাওয়া যায়। এগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
  5. সুষম খাবার: পুষ্টিকর খাবার, বিশেষ করে প্রোটিন ও ভিটামিন (যেমন: শাকসবজি, ফলমূল) শরীর থেকে আর্সেনিকের বিষক্রিয়া কমাতে সাহায্য করে।

শেষ কথা

আর্সেনিক কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। তাই আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীকে অবহেলা বা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রয়োজন শুধু সঠিক চিকিৎসা এবং সচেতনতা। আপনার এলাকার পানি নিরাপদ কি না, তা আজই যাচাই করুন। নিজে সুস্থ থাকুন এবং পরিবারকে সুস্থ রাখুন।

সতর্কতা: আর্সেনিকোসিসের লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *